সীমানা ছাড়াই সময়কাল, মাসিকের স্বাস্থ্যবিধি একটি মানবাধিকার এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে খাগড়াছড়িতে পালিত হয়েছে মাসিক স্বাস্থ্যবিধি দিবস।
আজ বুধবার (২৮ মে) সকালে খাগড়াছড়ি আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের হলরুমে অনুষ্ঠিত এই কর্মসূচির আয়োজন করে এম্পাওয়ারমেন্ট প্রকল্প ও তৃণমূল উন্নয়ন সংস্থা (TDU)। অর্থায়নে ছিল নাগরিকতা: সিভিক এনগেজমেন্ট ফান্ড (SEF) এবং এসডিসি (SDC)। কারিগরি সহায়তা প্রদান করে জিএফএ কনসালটিং গ্রুপ-জিওএমবিএইচ (GFA Consulting Group GmbH), জার্মানি।
জেলার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে আগত কিশোর-কিশোরী, শিক্ষক ও স্থানীয় প্রতিনিধিরা এই সচেতনতামূলক আলোচনায় অংশ নেন। সেখানে মাসিক বা ঋতুস্রাব নিয়ে সমাজে প্রচলিত ভ্রান্ত ধারণা, সামাজিক বাধা এবং গোপনীয়তার বিষয়টি তুলে ধরা হয়। উপস্থিত অংশগ্রহণকারীরা তাদের মতামত প্রকাশ করেন এবং মাসিক স্বাস্থ্যবিধি নিয়ে সমাজে সচেতনতা বৃদ্ধির প্রয়োজনীয়তার কথা বলেন।
আলোচনায় তৃণমূল উন্নয়ন সংস্থার সিনিয়র প্রকল্প কর্মকর্তা মিনুচিং মারমা সঞ্চালনা করেন। বক্তারা বলেন, মাসিক নিয়ে কথা বলা অনেক পরিবারে এখনো নিষিদ্ধের মতো হলেও এটি একটি স্বাভাবিক শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়া। স্বাস্থ্যবিধি না মানলে শারীরিক জটিলতা হতে পারে। তাই বিষয়টি গোপন না রেখে কিশোরীদের দৈনন্দিন জীবনে স্বাস্থ্যকর অভ্যাস গড়ে তোলার পরিবেশ তৈরি করতে হবে।
বক্তারা আরও বলেন, মাসিক স্বাস্থ্যবিধি নিয়ে সচেতনতা শুধু মেয়েদের জন্য নয়, ছেলেদেরও জানতে হবে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর পাঠ্যক্রমে বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা জরুরি। প্রতিটি স্কুলে স্যানিটারি ন্যাপকিন, বিশুদ্ধ পানি ও হাইজিন সরঞ্জামের সহজলভ্যতা নিশ্চিত করতে হবে।
তৃণমূল উন্নয়ন সংস্থার প্রতিনিধি বলেন, আমরা চাই খাগড়াছড়ির প্রতিটি স্কুলের কিশোরীরা যেন নিজের শরীর ও স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতন হয় এবং আত্মমর্যাদা রক্ষা করতে শেখে।
আলোচনা সভা শেষে শিক্ষার্থীদের মাঝে সচেতনতামূলক বার্তা সম্বলিত টি-শার্ট এবং শতাধিক কিশোরীর মাঝে স্যানিটারি ন্যাপকিন বিতরণ করা হয়। এছাড়াও মাসিককালীন ব্যথা, খাদ্যাভ্যাস, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে সহজ ভাষায় তথ্য উপস্থাপন করা হয়।
আয়োজকেরা জানান, এই কার্যক্রম শুধুমাত্র দিবস কেন্দ্রীক নয় বরং নিয়মিতভাবে স্কুলভিত্তিক সচেতনতামূলক কর্মসূচি পরিচালনার পরিকল্পনা রয়েছে। জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলের শিক্ষার্থীদের মধ্যেও সচেতনতা পৌঁছে দিতে তারা আগ্রহী।
এই আয়োজন প্রমাণ করে যে মাসিক স্বাস্থ্যবিধি নিয়ে খোলামেলা আলোচনা শুধু প্রয়োজন নয়, এটি একটি মৌলিক মানবাধিকার। নারীর স্বাস্থ্য ও মর্যাদা রক্ষায় সমাজে এ নিয়ে সাহসী ও খোলামেলা উদ্যোগ নেওয়ার এখনই সময়।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন খাগড়াছড়ি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক ত্রিনা চাকমা, খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার উনুচিং মারমা, খাগড়াপুর মহিলা কল্যাণ সমিতির প্রতিনিধি মনীষা তালুকদার, খাগড়াছড়ি আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অংপ্রু মারমা এবং স্থানীয় কার্বারীসহ অন্যান্য ব্যক্তিবর্গ।