খাগড়াছড়ি জেলার গিরিফুল এলাকা থেকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) পাঁচ শিক্ষার্থীকে অপহরণের চার দিন পেরিয়ে গেলেও এখনো তাদের উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। নিখোঁজদের পরিবারের সদস্যদের মধ্যে গভীর উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে। অপহৃত শিক্ষার্থীদের দ্রুত উদ্ধারের দাবি জানিয়েছেন দেশব্যাপী বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকরা। অপহরণ সংক্রান্ত এই ঘটনায় যৌথবাহিনী প্রথম দিন থেকেই নিরলসভাবে উদ্ধার অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
এ বিষয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির (সন্তু লারমা-সমর্থিত) পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি), ইউনাইটেড ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টকে (ইউপিডিএফ) দায়ী করেছে। পিসিপি কেন্দ্রীয় সভাপতি নিপণ ত্রিপুরা গণমাধ্যমকে জানান, পিসিপির চবি শাখার সদস্য রিশন চাকমাসহ তার চার বন্ধু খাগড়াছড়ির গিরিফুল এলাকা থেকে অপহৃত হয়েছেন। তিনি বলেন,
“শিক্ষার্থীরা সেদিন গাড়ির টিকিট না পেয়ে এক আত্মীয়ের বাড়িতে অবস্থান করছিলেন। পরদিন সকালে চট্টগ্রামে ফেরার পথে গিরিফুল এলাকায় টমটম চালকসহ তাদের অপহরণ করা হয়।”
তিনি অভিযোগ করেন,
“ইউপিডিএফ (প্রসীত গ্রুপ) সরাসরি এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত। আমরা অবিলম্বে সকল অপহৃতদের নিঃশর্তভাবে মুক্তি এবং সুস্থ অবস্থায় ফেরত দেওয়ার দাবি জানাচ্ছি। পাশাপাশি জড়িতদের আইনের আওতায় এনে কঠোর শাস্তির দাবি করছি।”
অন্যদিকে ইউপিডিএফ-এর সংগঠক অংগ্য মারমা এ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন,
“কোনো একটি পক্ষ আমাদের সংগঠনকে বিতর্কিত করতে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে অপপ্রচার চালাচ্ছে। আমরা ভ্রাতৃঘাতী সংঘাতের বিপক্ষে এবং সবসময় পাহাড়ে ঐক্যের পক্ষে কাজ করছি। এ অপহরণ ঘটনায় আমাদের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। এটি আমাদের ভাবমূর্তি নষ্ট করতে একটি গভীর ষড়যন্ত্রের অংশ।”
অপহৃত শিক্ষার্থীদের একজন দিব্যি চাকমার মা ভারতী চাকমা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি আবেগঘন পোস্টে লিখেছেন,
“আমার মেয়ে দিব্যি চাকমা তার সহপাঠী সহ বিজুতে গেলে, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ফেরার পথে খাগড়াছড়ির গিরিফুল এলাকা থেকে অপহরণ করা হয়েছে। প্লিজ কারোর মায়ের খালি না করে,দোষ থাকলে,অন্যায় করলে উপযুক্ত শাস্তি দিন তবুও সন্তান হারানোর বেদনা যেন কারোর বুকে না লাগে।আমি হাত জোড় করছি ফিরিয়ে দিন আমাদের সন্তানদের।
অপহৃত শিক্ষার্থীরা হলেন: চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ডিপার্টমেন্টের ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মৈত্রীময় চাকমা, নাট্যকলা বিভাগের ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী দিব্যি চাকমা, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী রিশন চাকমা, প্রাণীবিদ্যা বিভাগের ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী লংঙি ম্রো, চারুকলা ডিপার্টমেন্টের ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী অলড্রিন ত্রিপুরা। ভগবান খুব কষ্ট হচ্ছে, একটার পর একটা বিপদ।”
এদিকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, অপহরণের খবর পাওয়ার পরপরই তারা উদ্ধার তৎপরতা শুরু করেছে এবং অন্যান্য জোনও এই অভিযানে অংশ নিয়েছে। শিক্ষার্থীদের উদ্ধারে অভিযান এখনো অব্যাহত রয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত ১৬ এপ্রিল (বুধবার) খাগড়াছড়ি জেলা সদরের গিরিফুল এলাকা থেকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা, নাট্যকলা, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও প্রাণীবিদ্যা বিভাগের পাঁচজন শিক্ষার্থী এবং এক ইজিবাইক চালক নিখোঁজ হন। এ ঘটনায় খাগড়াছড়িতে চরম উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা ছড়িয়ে পড়ে।