Advertisement
khagrachari Plus
খাগড়াছড়িThursday , ১৭ অক্টোবর ২০২৪
buy-sell-khagrachari-plus
আজকের সর্বশেষ সবখবর

রিছাং ঝর্ণা: খাগড়াছড়ির প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও অ্যাডভেঞ্চারের মেলবন্ধন

নিজস্ব প্রতিনিধি
১৭ অক্টোবর ২০২৪, ১০:১৮ AM ৩২৫ জন পড়েছেন
Link Copied!

খাগড়াছড়ির রিছাং ঝর্ণা: বাংলাদেশের পর্যটন মানচিত্রে এক অন্যতম আকর্ষণীয় স্থান হলো খাগড়াছড়ির রিছাং ঝর্ণা। পাহাড়ি পরিবেশ, সবুজের সমারোহ এবং ঝর্ণার মনোরম শব্দ সব মিলে এই স্থানটিকে করেছে পর্যটকদের কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয়।


রিছাং ঝর্ণা: জল ও প্রকৃতির এক অপূর্ব মিলন!।

রিছাং ঝর্ণা: এক নজরে

জেলা সদর থেকে আলুটিলা পেরিয়ে কিছুটা পশ্চিমে মূল রাস্তা থেকে উত্তরে ঝর্ণাস্থলের দূরত্ব প্রায় ১১ কিলোমিটার। এছাড়াও মাটিরাঙা উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার দূরত্বে এই ঝর্ণার অবস্থান। খাগড়াছড়ি থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম যাওয়ার মূল সড়ক থেকে প্রায় ১ কিলোমিটার দক্ষিণে, চারিদিকের পাহাড়ি প্রকৃতির মাঝে অবস্থিত ‘রিছাং ঝর্ণা’। ঝর্ণার যাত্রাপথটি একদম রোমাঞ্চকর, যেখানে উঁচু-নীচু সবুজ পাহাড়, বুনোঝোঁপ এবং নামহীন রঙিন বুনোফুলের অপূর্ব সৌন্দর্য আপনার কল্পনাকে অন্য এক জগতে নিয়ে যাবে। যখন ঝর্ণার নিকটবর্তী হন, তখন এক পবিত্র ও শীতল অনুভূতি আপনার দেহমনকে ভরিয়ে তোলে। ২৫-৩০ হাত তথা প্রায় ১০০ ফুট উঁচু পাহাড় থেকে জলরাশি আছড়ে পড়ছে, যা ঢালু পাহাড়ের ওপর দিয়ে গড়িয়ে নিচে চলে যাচ্ছে। এই স্থানে দুটি ঝর্ণা রয়েছে, যেখানে প্রতিদিন বহু পর্যটক এসে ভিড় জমায় এবং ঝর্ণার শীতল পানিতে স্নান করে প্রকৃতির সাথে মিলিত হন।

রিছাং ঝর্ণার নামের উৎপত্তি

মারমা ভাষায় এই ঝর্ণার নাম রিছাং ঝর্ণা; ‘রি’ শব্দের অর্থ পানি এবং ‘ছাং’ শব্দের অর্থ গড়িয়ে পড়া। মূল সড়ক থেকে রিছাং ঝর্ণায় যাওয়ার পথে চারপাশের পাহাড়ি প্রকৃতি আপনার মনে এক অনন্য অনুভূতি সৃষ্টি করে।

রিছাং ঝর্ণার আকর্ষণীয় দিকগুলো

  • প্রাকৃতিক সৌন্দর্য: চারিদিকে সবুজ পাহাড়, ঝর্ণার স্বচ্ছ জল এবং শীতল বাতাস মিলে এক অপরূপ সৌন্দর্যের সৃষ্টি করেছে। এই সৌন্দর্য যে কাউকে মুগ্ধ করতে বাধ্য।
  • ওয়াটার স্লাইডিং: যারা ওয়াটার স্লাইডিং করতে ভালোবাসেন তারা এখানে প্রাকৃতিকভাবে পাথড় দিয়ে তৈরি স্থানে স্লাইডিং করতে পারবেন। এক্ষেত্রে মোটা কাপড় তথা জিন্স টাইপের কিছু পড়লে ভালো হয়।
  • পাহাড়ি পরিবেশ: পাহাড়ি অঞ্চলে অবস্থিত হওয়ায় এখানে আবহাওয়া সবসময়ই প্রশান্ত থাকে। শহরের কোলাহল থেকে দূরে এই স্থানটিতে এসে নিজেকে একটু সময় দিতে পারেন।
  • সহজ যোগাযোগ: খাগড়াছড়ি সদর থেকে রিছাং ঝর্ণা যাওয়ার জন্য সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা মোটামুটি ভালো। যে কেউ সহজেই স্বল্প সময়ে এখানে পৌঁছাতে পারবেন।
  • সাধারণ মানুষের আকর্ষণ: স্বল্প খরচে এখানে ভ্রমণ করা সম্ভব। সকল শ্রেণির মানুষের জন্য এই স্থানটি খোলা।

রিছাং ঝর্ণায় কী কী করতে পারবেন?

  • ঝর্ণার পানিতে গোসল: ঝর্ণার শীতল পানিতে গোসল করে শরীর ও মনকে প্রফুল্ল করে তুলতে পারবেন।
  • প্রকৃতির মাঝে সময় কাটান: পাহাড়ি পরিবেশে বসে বই পড়া, গান শোনা বা মনের মানুষের সাথে কথা বলা যেতে পারে।
  • পাহাড়ি পথে হাঁটা: পাহাড়ি পথে হাঁটিয়ে শরীরচর্চা করতে পারবেন।
  • স্থানীয় খাবার: এখানে বিভিন্ন ধরনের স্থানীয় খাবার চেখে নিতে পারবেন।
  • পিকনিক: পরিবার বা বন্ধুদের সাথে পিকনিক করতে পারেন।

রিছাং ঝর্ণা যাওয়ার নির্দেশনা

খাগড়াছড়ি সদর থেকে রিছাং ঝর্ণা যাওয়ার জন্য বিভিন্ন ধরনের গাড়ি পাওয়া যায়। ঢাকা থেকে খাগড়াছড়িতে পৌঁছানোর জন্য নিয়মিত বিভিন্ন বাস সার্ভিস রয়েছে। সকল বাস পরিবহনের নাম ও ফোন নাম্বার আমাদের খাগড়াছড়ি প্লাস অ্যাপসে পেয়ে যাবেন। ঢাকা থেকে বিভিন্ন পরিবহনের বাসে সরাসরি খাগড়াছড়ি আসা যায়। খাগড়াছড়ি শহরে পৌঁছে রিছাং ঝর্ণা যাওয়ার জন্য সহজে সিএনজি বা জীপ ভাড়া পাওয়া যায়। সিএনজি কিংবা জীপ ভাড়া নেওয়ার জন্যে আমাদের খাগড়াছড়ি প্লাস অ্যাপসে অসংখ্য সিএনজি ও জীপ ড্রাইভারদের ফোন নাম্বার পেয়ে যাবেন। তবে কেউ যদি নিজস্ব বাইক নিয়ে আসেন, সেক্ষেত্রে ঝর্ণার কাছাকাছিতে যে সিঁড়ি রয়েছে সেখানে পর্যন্ত বাইক নিয়ে যেতে পারবেন। অবশ্যই বাইক চালনায় পারদর্শী হতে হবে, যেহেতু অনেক উঁচু নিচু ব্রিক সলিন রোড।

পর্যটকদের জন্য পাহাড়ি রাস্তার যাত্রাপথও বেশ মনোরম ও উপভোগ্য, বিশেষত যখন তারা পাহাড়ি অঞ্চলের পথে ভ্রমণ করেন। ঝর্ণায় পৌঁছার জন্যে স্থানীয়দের কাছ থেকেও সহজেই নির্দেশনা পাবেন।

থাকার ব্যবস্থা

খাগড়াছড়ি শহরে বিভিন্ন মানের হোটেল ও রিসোর্ট রয়েছে, যেগুলোতে পর্যটকরা তাদের বাজেট অনুযায়ী রুম ভাড়া করতে পারেন। আলুটিলার কাছাকাছি কিছু ছোট রিসোর্টও পাওয়া যায় যেখানে আপনি শান্তিপূর্ণভাবে রাত কাটাতে পারবেন। খাগড়াছড়ি জেলার প্রায় সকল হোটেল এর তালিকা ও ফোন নাম্বার আমাদের খাগড়াছড়ি প্লাস অ্যাপসে পেয়ে যাবেন। সেখানে যোগাযোগ করে আপনার পছন্দসই যেকোনো হোটেল বাছাই করতে পারবেন।

রিছাং ঝর্ণা ভ্রমণের কিছু টিপস

  • সাথে নিতে হবে: পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি, খাবার, সানস্ক্রিন, মশারি, টুপি, সানগ্লাস এবং আরামদায়ক জুতা।
  • পরিবেশ রক্ষা: ঝর্ণা ও এর আশেপাশের পরিবেশ পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করুন।
  • স্থানীয়দের সঙ্গে ভালো ব্যবহার: স্থানীয়দের সাথে ভালো ব্যবহার করে তাদের সংস্কৃতি সম্পর্কে জানার চেষ্টা করুন।
  • সুরক্ষা: পাহাড়ি পথে হাঁটার সময় সাবধান থাকুন এবং স্থানীয়দের পরামর্শ অনুসরণ করুন।
  • বর্জ্য ব্যবস্থাপনা: কোনো ধরনের বর্জ্য এখানে ফেলে রাখবেন না।

রিছাং ঝর্ণা সম্পর্কিত কিছু অতিরিক্ত তথ্য

  • ঝর্ণার আশেপাশে বিভিন্ন ধরনের গাছপালা: ঝর্ণার আশেপাশে বিভিন্ন ধরনের গাছপালা দেখতে পাওয়া যায়।
  • ঝর্ণার পানি ব্যবহার: এই ঝর্ণার পানি কৃষিকাজে ব্যবহৃত হয়।
  • পর্যটকদের জন্য সুবিধা: ঝর্ণার আশেপাশে পর্যটকদের জন্য বিভিন্ন ধরনের সুবিধা রয়েছে, যেমন- টয়লেট, খাবারের দোকান ইত্যাদি।

উপসংহার

খাগড়াছড়ির রিছাং ঝর্ণা প্রকৃতিপ্রেমীদের জন্য এক আদর্শ গন্তব্য। এখানে এসে আপনি প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবেন এবং মনকে প্রফুল্ল করে তুলতে পারবেন। এই ঝর্ণাটি বাংলাদেশের পর্যটন খাতে একটি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে।

ভ্রমণ নিয়ে আরও পড়ুন…