খাগড়াছড়ি শহরে গত সপ্তাহে দশম শ্রেণির এক শিক্ষার্থীকে জোরপূর্বক ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টার ঘটনায় অভিযুক্ত গোপিনাথ ত্রিপুরার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
আজ বুধবার (০৪ ডিসেম্বর) সকালে খাগড়াছড়ি শহরের প্রেসক্লাবের সামনে ত্রিপুরা স্টুডেন্টস ফোরাম, বাংলাদেশ এর আয়োজনে অনুষ্ঠিত হয়। গোপিনাথ ত্রিপুরার বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে তার কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করার দাবি জানান। বক্তারা এই ঘটনার জন্য অভিযুক্তের শাস্তি নিশ্চিত করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
তারা আরও বলেন,
“এটি শুধু একটি পরিবারকে নয়, পুরো সমাজকে প্রভাবিত করেছে। ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা জরুরি যাতে ভবিষ্যতে এমন অমানবিক অপরাধে আর কেউ শিকার না হয়।”
মানববন্ধনে বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন, মানবাধিকার সংগঠন, ও নারীকল্যাণ সংগঠনের প্রতিনিধিরা অংশ নেন এবং তারা যৌথভাবে এ ঘটনায় বর্তমান অন্তবর্তীকালীন সরকারের কাছে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণের দাবী জানান।
এ ঘটনায় খাগড়াছড়ি জেলার সাধারণ মানুষের মধ্যে চরম ক্ষোভ এবং উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে। অনেকেই অভিযুক্তের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি এবং ভুক্তভোগীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের প্রত্যাশা করেছেন।
মানববন্ধনে ত্রিপুরা স্টুডেন্টস ফোরামের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি নয়ন ত্রিপুরা’র সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন খাগড়াপুর মহিলা কল্যাণ সমিতির নির্বাহী পরিচালক শেফালিকা ত্রিপুরা, খাগড়াছড়ি আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অংপ্রু মারমা, পেরাছড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বিম্বীসার খীসা, উইমেন রিসোর্স নেটওয়ার্ক জেলা সমন্বয়কারী নমিতা চাকমা, কাবিদাং এর নির্বাহী পরিচালক লালসা চাকমা, টিআইবি-খাগড়াছড়ির কো-অর্ডিনেটর মোঃ আব্দুর রহমান, উইমেন এক্টিভিস্ট ফোরামের প্রতিনিধি পিংকি বড়ুয়া, সাংবাদিক প্রতিনিধি চিংমেপ্রু মারমা, বাংলাদেশ ত্রিপুরা যুব কল্যাণ সমিতির প্রতিনিধি নক্ষত্র ত্রিপুরা, বাংলাদেশ মারমা স্টুডেন্টস্ কাউন্সিলের প্রতিনিধি উক্যনু মারমা।
বক্তারা এ ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন,
“এ ধরনের জঘন্য অপরাধ সমাজে নারীদের নিরাপত্তাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। অপরাধীর কঠোর শাস্তি নিশ্চিত না করলে ভবিষ্যতে এমন অপরাধের পুনরাবৃত্তি হবে।”
মানববন্ধনের শেষে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টার কাছে স্মারকলিপি প্রদান করা হয়, যাতে উল্লেখিত দাবিসমূহ ছিল:
১. গোপিনাথ ত্রিপুরার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দ্রুত নিশ্চিত করা।
২. ভুক্তভোগীর উন্নত চিকিৎসা নিশ্চিত করা।
৩. ভুক্তভোগী পরিবারের নিরাপত্তা ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা নেওয়া।
৪. ধর্ষণ ও নির্যাতনের শিকারদের জন্য হাসপাতালগুলোতে বিশেষায়িত সেবা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা।
৫. ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর শিক্ষার ব্যয় সরকারের মাধ্যমে বহন করা।
উল্লেখ্য যে, গত ২৭নভেম্বর বুধবার বিকালে মোবাইলে টাকা টাকা রিচার্জ করে বাসায় ফেরার সময় আগে থেকে উৎপেতে থাকা গোপিনাথ ত্রিপুরা মেয়েটিকে ভয় দেখিয়ে মুখ চেপে ধরে ৫ মাইল যৌথ খামার এলাকায় একটি বাগানে নিয়ে গিয়ে ইচ্ছার বিরুদ্ধে জোরপূর্বক ও ইচ্ছার বিরুদ্ধে ধর্ষন করেন। মেয়েটির নাক দিয়ে রক্ত ঝরে পড়ে। পরে ধর্ষক গোপিনাথ ত্রিপুরা আবারও শিশুকে গলা, নাক, মুখ ও ডান পায়ের রানে উপর্যুপরি কিল, ঘুষি ও লাথি মারিয়া নীলা-ফুলা জখম করে জোরপূর্বক ইচ্ছার বিরুদ্ধে ধর্ষণ করেন। জোরপূবক ধর্ষণের পর গলা চেপে ধরে শ্বাসরোধে হত্যার চেষ্টা করা হয়। ধর্ষণ শেষে মেয়েটিকে গলায় চেপে শ্বাসরোধ করে হত্যার চেষ্টায় মেয়েটি অজ্ঞান হয়ে যায়। পরে ধর্ষক(গোপিনাথ) মেয়েটি মারা গেছে ভেবে ফেলে রেখে পালিয়ে যায়। পরবর্তীতে মেয়েকে(শিশু) মুমূর্ষু অবস্থায় উদ্ধার করে দ্রুত ২৫০শয্যা বিশিষ্ট আধুনিক জেলা সদর হাসপাতাল খাগড়াছড়িতে ভর্তি করানো হয়। অবস্থা অবনতি হওয়ায় চট্টগ্রাম মেডিকেলে রেফার করা হয়েছে। বর্তমানে মেয়েটি চট্টগ্রাম হাসপাতালে মুমূর্ষ অবস্থায় চট্টগ্রামে চিকিৎসাধীন রয়েছে।
এই ঘটনায় খাগড়াছড়ি জেলার জনসাধারণের মধ্যে উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়েছে এবং দ্রুত বিচার ও নিরাপত্তার দাবি উঠেছে।
খাগড়াছড়ি নিয়ে আরও পড়ুন…